Saturday, May 18th

Last update09:04:19 PM GMT

: প্রথম পাতা সরকারি কর্মচারীদের দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী

সরকারি কর্মচারীদের দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী

E-mail Print PDF

1530694415-PM 2-600x337স্টাফ রিপোর্টার: বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মচারীদের দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমি মনে করি, সরকারি কর্মচারীদের দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি করা একান্তভাবে প্রয়োজন। কারণ আমরা যদি এই লক্ষ্যটা অর্জন করতে পারি, সমস্ত কাজগুলো বা সরকারি কর্মকা-গুলো ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, দক্ষতার সাথে বাস্তবায়ন করতে পারি, তার সুফল স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদীভাবে মানুষ পাবে। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার উপস্থিতিতে প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষে সিনিয়র সচিব ও সচিবরা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের কর্মসম্পাদন চুক্তিতে সই করেন। পরে তারা প্রধানমন্ত্রীর হাতে এই চুক্তি হস্তান্তর করেন। সরকারি কর্মচারীদের দক্ষতা এবং দায়বদ্ধতা বৃদ্ধির মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ ধরনের ‘পারফরমেন্স ম্যানেজমেন্ট’ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সরকারি কর্মকা-ে দক্ষতা বৃদ্ধি ও গতিশীলতা আনা, সেবার মানোন্নয়ন এবং প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ফলাফলভিত্তিক এই সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে সচিবের মধ্যে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি একটি সমঝোতা দলিল হিসাবে বিবেচিত হয়। একইভাবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে এবং দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রধানরা মাঠ পর্যায়ের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তিতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কৌশলগত উদ্দেশ্যগুলো এবং তা অর্জনের জন্য গৃহীত কার্যক্রম এবং এ কার্যক্রমের ফলাফল পরিমাপের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক ও লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা থাকে। অর্থবছর শেষে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রকৃত অর্জন মূল্যায়ন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফল দেশ পাচ্ছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, পাশাপাশি আমাদের কাজের মানেরও উন্নতি হচ্ছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা হয়ত পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করি। কিন্তু আপনারা সরকারি কর্মচারী যারা; আপনাদের ওপর দায়িত্ব বর্তায় সেগুলো বাস্তবায়ন করার। এই যে দক্ষতার সাথে আপনারা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন; তার ফলাফলটা আমরা পাচ্ছি। বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে এবং অনেক অর্জন আমরা দেখাতে পারছি। জনগণের কাছে রাজনীতিবিদদের দায়বদ্ধতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের কাছে কিন্তু আমাদের পরীক্ষা দিতে হয়। পাঁচ বছর পর পর আমাদের জনগণের কাছে যেতে হবে ভোট চাইতে। আমাদের দেখাতে হবে- তাদের জন্য কতটুকু করতে পেরেছি। সরকার ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির যে পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায়, সেই লক্ষ্য অর্জনে মাঠপর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কর্মসূচি প্রণয়নের অনুরোধ জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ থাকবে, আমাদের পরবর্তী ধাপটা কী হবেৃ ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। সেই দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে হলে আমাদের কোথায় কোথায় কী কী করণীয়; এ ব্যাপারে যে ধারণাগুলো আপনারা পাবেনৃ অন্তত আমি মনে করব; সেটুকু আপনারা কিন্তু দিতে পারেন। তাতে করে আমরা আগামি দিনের পরিকল্পনা নিয়ে নিতে পারি। সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছে, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ আছে, রাজনৈতিক দল সৃষ্ট দুর্যোগ আছে; সব মোকাবেলা করে কিন্তু দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কোনো ক্ষেত্রে কিন্তু আমরা পিছিয়ে যাই নাই। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের অগ্রগতির জন্য জনগণের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদেরও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দেশের জনগণকে যেমন আমি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই, সেই সঙ্গে আপনারা যারা এই কর্মযজ্ঞের সাথে জড়িত, সকল সরকারি-কর্মচারীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, আপনারা এই কাজগুলো আন্তরিকতার সাথে করে যাচ্ছেন। অন্তত আপনারা বুঝতে পরেছেন; আমরা কি চাই। সুষ্ঠুভাবে এ চুক্তি বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশ রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের পাশাপাশি এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সুশাসন নিশ্চিতকরণে সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির বাস্তবায়নে সফলতার স্বীকৃতি হিসাবে এ অনুষ্ঠানে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ; মহিল ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়কে সম্মাননাপত্র দেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার ২০১২ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন করে, যার মূল লক্ষ্য হল শুদ্ধাচার চর্চা ও দুর্নীতি প্রতিরোধের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। এর ধারাবাহিকতায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নেতৃত্বে সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্ম-পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরিবীক্ষণ কাঠামো প্রণয়ন করছে। ২০১৭ সালে শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এ নীতিমালার আলোকে এবারই প্রথম সিনিয়র সচিব ও সচিব পর্যায়ে শুদ্ধাচার পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব মো. মফিজুল ইসলাম এ পুরস্কার পেয়েছেন। সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, আমরা যে মর্যাদা পেয়েছি; তা ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। আর্ন্তজাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিচারে জিডিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪৩তম এবং ক্রয় ক্রমতার ভিত্তিতে ৩২তম দেশ। ২০১৭ সালে দ্রুততম প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় ছিল বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রতিটি গ্রাম হবে শহরের মত। প্রতিটি মানুষ নাগরিক সবিধা পাবে। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শেষে ‘এসডিজি’স ইমপ্লিমেন্টেশন রিভিউ কনফারেন্স ২০১৮’ এর উদ্বোধন করেন। মন্ত্রিসভার সদস্যদের উপস্থিতিতে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সমন্বয় ও সংস্কার) সচিব এন এম জিয়াউল আলম। অন্যদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবু মাল আবদুল মুহিত, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

Share this post