Wednesday, Apr 24th

Last update09:04:19 PM GMT

: সম্পাদকীয় চাটুকার কৃষ্ণের টাট্টুঘোড়া- পন্ডিতজী ও ল্যাংটা বাবার গল্প

চাটুকার কৃষ্ণের টাট্টুঘোড়া- পন্ডিতজী ও ল্যাংটা বাবার গল্প

E-mail Print PDF

(এ.কে.এম শামছুল হক রেনু)

নিবন্ধটিতে বাস্তবতার আলোকে চামচা, চাটুকার সম্পর্কে বলা হয়েছে। তা যেমন কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠি, দল ও শাসন প্রশাসনের পক্ষে বিপক্ষে নয় তেমনিভাবে কাহাকে আকাশে এবং কাহাকেও পাতালে নেয়ারও নহে। আদিম যুগ বাদ দিয়ে সভ্য দুনিয়ার আবির্ভাব থেকে এ পর্যন্ত শাসন, প্রশাসন, মন্ত্রী, এমপি, টাকাওয়ালা, ক্ষমতাশালী, প্রভাবশালীসহ সর্বক্ষেত্রে দুর্বিনীত চামচা, চাটুকার, ভার নিয়ে অজস্র গল্প কাহিনীর কথা শোনা যায়। যা মাঝে মধ্যে প্রকাশিত হয়ে থাকে। যার মাঝে অনেক সময় ইতিহাসের ছোঁয়া খুঁজে পাওয়া যায়। তদোপরি আমলা, প্রভাবশালী শিল্পপতি ও দুর্নীতিবাজদের আষ্টে পিষ্টে বিভিন্ন সময়ে চামচা চাটুকাররাই অনেককে বিভ্রান্ত করে এবং কান কথার মাধ্যমে ভুলপথে ধাবিত করেও থাকে। যার রয়েছে অসংখ্য উদাহরণ। তাই যুগে যুগে চামচা চাটুকাররা নরকীট হিসেবে স্বীকৃত। কথিত আছে চামচা চাটুকাররা এক সময় যেমনি কাহাকে আকাশে তুলে তেমনি স্বার্থের ব্যাঘাত হলে আকাশ থেকে মাটিতে ফেলতেও কুণ্ঠবোধ করেনি।

কথিত আছে পাকুন্দিয়ার জাঙ্গালীয়ার কৃষ্ট মোহন দাস, কিশোরগঞ্জের বত্রিশের পরামানিক ও মুক্তাগাছার অত্যাচারী জমিদারের অগণিত চামচা-চাটুকার ছিল। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে প্রজাদের নিগ্রহ, জ্বালা-যন্ত্রণা, উৎপীড়নের হৃদয় বিদারক ইতিহাস। এরই মধ্যে কৃষ্ণ ছিল জমিদার কৃষ্ট মোহন দাসের সব চাটুকারের শিরোমনি। কৃষ্ণের একটি ঘোড়া ছিল। ঘোড়াটি কৃষ্ণের টাট্টু ঘোড়া হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রজাদের কাছ থেকে রীতিমত খাজনা, ট্যাক্স না পেলেই জমিদার কৃষ্ট মোহন দাসকে খুশী করার জন্য টাট্টু ঘোড়া দাবড়িয়ে প্রজাদের ক্ষেতের উঠতি ফসল যেমনি নষ্ট করা হতো তেমনি কিছু হতে না হতেই প্রজাদের ওপর টাট্টু ঘোড়া লেলিয়ে দিত। এমনকি প্রজাদের বাড়ীর ধান, চাউল, তেল, লবণ এক সাথে মিশিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করত না। তদোপরি সে তার চামচা চাটুকারের পারিষদ নিয়ে সব সময়ই প্রজাদের বিরুদ্ধে কান কথা বলে জমিদারকে বুঝাতে পারঙ্গম ছিল। এক সময় ব্রিটিশের পতনের আগে এ এলাকায় প্রজা বিদ্রোহ দেখা দিলে জমিদার কৃষ্ট মোহন দাস, কৃষ্ণ ও তার পারিষদকে ডেকে আনলে সে জমিদারকে বলে তেমন কিছু নয়। দু-চারটা ফাঁকা গুলির আওয়াজ করলে ওরা ভয়ে সন্ত্রস্থ হয়ে চলে যাবে। যেই কথা সেই কাজ। জমিদার দু-চারটা ফাঁকা গুলি করার সাথে সাথে হাজার হাজার অত্যাচারীত ও নিপীড়িত প্রজারা জমিদারের আলিশান বাড়ীতে আগুন দিলে জমিদার পালানোর চেষ্টা কালে কৃষ্ণকে তার পারিষদ ও টাট্টু ঘোড়া নিয়ে হাজির হতে বললে, কৃষ্ণ তখন জমিদারকে বলে হুজুর যেভাবে পারেন বাঁচেন। আমার ও আপনার পারিষদের জীবন বাঁচানোই দায়। এই কথা বলে জমিদার ও তার পরিবারবর্গকে ফেলে রেখে কৃষ্ণ কোনমতে টাট্টু ঘোড়া নিয়ে বেঁচে গেলেও উত্তেজীত প্রজারা জমিদারকে ধরে এনে জনতার আদালতে প্রকাশ্যে শাস্তি দেয় এবং জমিদারের এহেন পরিণতির জন্য দায়ী করে তার প্রধান চামচা ও চামচার পারিষদের। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, চামচা কৃষ্ণ তার টাট্টু ঘোড়া নিয়ে প্রজা রোষ থেকে কেটে পড়লেও জমিদার কৃষ্ট মোহন দাস প্রজাদের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি।


একবার কোনো এলাকায় একজন পন্ডিত ব্যক্তি ছিল। এলাকার সকলেই তাকে পন্ডিতজী বলেই ডাকত। সেই এলাকায় একজন ল্যাংটা বাবাও ছিল। এলাকায় কিছু হলেই এলাকার লোকজন পন্ডিতজীর কাছ থেকে বুদ্ধি পরামর্শ নিত। একবার এলাকায় কলেরা, বসন্ত মহামারী দেখা দিলে সবাই তার কাছে পরামর্শের জন্য গেলে পন্ডিতজী বললো, এলাকার ছোট বড় সকলেই একটি খোলা মাঠে জমায়েত হয়ে দুই রাকাত নফল নামায আদায় ও তওবা করে আল¬াহর দরবারে মাগফেরাত প্রার্থনা করলে আল¬াহর গায়েবী সাহায্যে এর বালা-মসিবত কেটে যাবে। পন্ডিতজীর কথা মত এলাকার ছোট বড় সকলেই জমায়েত হয়ে আল¬াহর দরবারে নামায, তওবা ও অজিফা পড়ে এলাকার মহামারী পরিত্রাণের জন্য দোয়া, দরূদ ও প্রার্থনা করতে লাগলো। কিন্তু এলাকার কিছু লোক এ জমায়েতে না এসে ভন্ড, প্রতারক, স্বার্থপর, ল্যাংটা বাবার কু-পরামর্শে ল্যাংটা মিছিল করে। পরে তাদের ভুল বুঝতে পেরে ল্যাংটা অবস্থায় জমায়েতে শরিক হলে তা দেখে পন্ডিতজী তাদেরকে জিজ্ঞাসা করল, তোমরা মিছিল করে এ অবস্থায় এখানে এলে কেন। এভাবে আসাতো বেদাত ও শরীয়ত বিরোধী কাজ। এটাতো ভালো হয়নি। যাও কাপড় চোপড় পড়ে জমায়েতে সামিল হও। পন্ডিতজীর কথামত সকলেই কাপড় চোপড় পড়ে জমায়েতে এসে পন্ডিতজীকে বললো, এটা আমাদের চিন্তা বুদ্ধিতে হয়নি, এটা ল্যাংটা বাবার বুদ্ধি পরামর্শে করেছি। জমায়েত শেষে সবাই মিলে ভন্ড, প্রতারক ও কুমন্ত্রণাকারী ল্যাংটা বাবার আস্তানা ভেঙ্গে দিলে জনরোষের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা কালে উত্তেজিত জনতা তাকে ধরে কিল, ঘুসি, লাথি মারতে থাকলে ল্যাংটা বাবা প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে কোনোমতে বেঁচে যায়। প্রস্তানের সময় অনুসারীদের বলে যায়, কারোও কু-মন্ত্রণায় কখনও বিভ্রান্ত হইও না। আমার যে অবস্থা তোমাদের পরিণতিও এমন হবে। ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবীও না।

এমনিভাবে প্রাণভিক্ষা চেয়ে এবং কিছু পরামর্শ ও উপদেশ দিয়ে ল্যাংটা বাবা অজানা গন্তব্যে চলে গেলেও ল্যাংটা বাবার সাগরেদদের ভুল চিকিৎসা ও ঝাড়া ফুঁর কারণে সঠিক চিকিৎসার অভাবে যে সমস্ত কলেরা ও বসন্ত রোগী অকালে প্রাণ হারিয়েছে এই অভিযোগে ভোক্তভোগী ও এলাকার লোকজন একজন একজন করে ল্যাংটা বাবার লোকজনদেরকে ধরে এনে শাস্তির ব্যবস্থা করে আইনে সোপর্দ করতে চাইলে আবার সবাই বলতে থাকে আমাদের ইচ্ছাতে তো তা করা হয়নি। সবকিছুই ল্যাংটা বাবার নির্দেশেই করা হয়েছে। কিন্তু পাপ যেমন বাপকে ছাড়ে না, তেমনি পাপী কখনও শাস্তি ছাড়া দুনিয়া থেকে বিদায় হয় না (ঝরহহবৎ পধহ হবাবৎ মড় ঁহঢ়ঁহরংযবফ)। এমনিভাবে না জেনে, না বুঝে প্রভুর মন তুষ্টির জন্য শিষ্যরা যেমন বেশি বেশি চামচা চাটুকারীতা করে থাকে তেমনি চামচা চাটুকারিতা ও মোসাহিবির কারণে অনেকেই অনেক সময় অন্যায় আবদার রক্ষা করে থাকে। কিন্তু একদিন চামচা চাটুকারদের যেমনি জনতার আদালতে শাস্তিভোগ করতে হয় তেমনি অত্যাচারীদেরও নি®কৃতি হয়না। যার রয়েছে অসংখ্যা উদাহরণ। এ নিবন্ধে সেদিকে যাচ্ছি না। তবে আক্কেলছে বান কেলিয়ে ইশারায়ে কাফিয়ে। অর্থাৎ সবকিছুতে জঞ্জাল ও ফেৎনা সৃষ্টির পেছনে স্বার্থপর চামচা-চাটুকার নামীয় এই সাধুবেশী শয়তানদের কুমন্ত্রনাকে দায়ী করলে দোষের কিছু না থাকারই কথা।

গত ১ সেপ্টেম্বর শনিবার বিশিষ্ট সাংবাদিক আলমগীর স্বপন এবার ফাঁদে দুদক? এই শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরের কলামে বিশদভাবে দুর্নীতিরোধে দুদকের কিছু সমস্যাসহ অন্যান্য প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আমলাতান্ত্রিক স্বার্থপরতার কিছু বিশে¬ষণ করেছেন। তাতে তিনি যা লিখেছেন, কলামের সংক্ষিপ্ততার কারণে আদ্যোপান্ত বিশে¬ষণ করার সুযোগ হয়নি। যার আদ্যোপান্ত অন্য নিবন্ধে উদ্ধৃত করার ইচ্ছা রয়েছে। তিনি লিখেছেন, ২০/৮/১৮ ইং মন্ত্রীসভায় সরকারি চাকরি আইন খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। এর একটি ধারায় আছে ফৌজদারী অপরাধে চার্জশিটের আগে কোনো সরকারী কর্মকর্তা- কর্মচারীকে গ্রেফতার করা যাবে না। প্রয়োজন হলে সরকারের অনুমোদন নিতে হবে। এ ধারাটি সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের বিরোধী। এতে আছে সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। প্রস্তাবিত আইনে দূর্নীতিবাজদের গ্রেফতার অনুমোদনের বিষয়টি দুদক আইনের কয়েকটি ধারার সাথে সাংঘর্ষিক। দুদক আইন- ২০০৪ অনুযায়ী দূর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। আইনের ২৪ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের বিধানাবলীর সাপেক্ষে কমিশনারগণ এই আইনের অধীন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন। এ প্রসঙ্গে উদাহরণ টেনে তিনি নাসিরুদ্দিন হোজ্জার একটি গল্প তার নিবন্ধে উলে¬খ করেছেন। একদিন ঠাট্টার ছলে মোল¬া নাসিরুদ্দিন উজিরকে বললেন, জানেন হুজুর ভাগ্য গণনা করে দেখলাম আগামীকালই আপনার অপঘাতে মৃত্যু হবে। তখন কে জানত পরদিন ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে সত্যিই বৃদ্ধ উজির মারা যাবে। এ ঘটনার কথা শেষ পর্যন্ত বাদশাহর কানে উঠল। মোল¬ার অলুক্ষণে কথায় উজিরের জীবন গেছে শুনে তিনি ক্রোধান্বিত হয়ে পড়লেন। হুকুম দিলেন কে কোথায় আছিস এক্ষুনি হতছাড়া মোল¬াকে বেঁধে নিয়ে আয়। যেই কথা সেই কাজ। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রহরীরা মোল¬াকে বেঁধে আনল। বাদশাহ বললেন, নাসিরুদ্দিন তুমি আমার প্রিয় উজিরকে অভিশাপ দিয়ে মেরে ফেলেছ, তোমাকে কী শাস্তি দিব, সেটা তুমি নিজেই বলো। হুজুর আপনিই যখন আমাকে অপরাধী সাব্যস্থ করেছেন, তখন আপনিই সেটা ঠিক করুন। বহুত আচ্ছা, তুমি যখন অন্য লোকের মৃত্যুর সংবাদ গণনা করে বার করতে পারো, তখন নিজের মৃত্যুর দিন ক্ষণটা ঠিক করে বলো। কিন্তু হুশিয়ার এ ব্যাপারে যদি তোমার জ্ঞান না থাকে আর উল্টো কিছু বলো তাহলে আজই হবে তোমার জীবনের শেষদিন। জি হুজুর মোল¬া বাদশাহকে কুর্ণিশ করে


বললেন, আপনার মৃত্যুর ঠিক একদিন আগে আমার মৃত্যু হবে জাহাপনা। যাকে বলে চব্বিশ ঘন্টা আগে পরে। মোল¬ার কথা শুনে বাদশাহ ভয়ে বিবর্ণ হয়ে গেলেন। তিনি প্রহরীদের তখনই মোল¬াকে মুক্তির নির্দেশ দিলেন। তারপর তাদের ডেকে বললেন, তোমরা সর্বক্ষণ ওকে পাহারা দিয়ে রাখবে যাতে ও কোনমতেই মারা না যায়। হোজ্জার কথার চালে বাদশাহ মহাশয় শুধু কুপোকাতই হননি ভয়ে হোজ্জার সার্বিক নিরাপত্তাও দিতে হয়েছে। আমলাতন্ত্রের আইনী চালও একই রকম। যে সংসদ সদস্যরা প্রস্তাবিত সরকারী চাকরি আইনটি সংসদের পাস করবেন, তাদের গ্রেফতার করা যাবে অনুমোদন ছাড়া। আর যাদের জন্য তারা সংসদে হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে বলবেন, তারা এক্ষেত্রে পাবেন আইনের বাড়তি সুবিধা।

কিছু লোক বহু সময় ধরে এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময় ও পাক বাহিনীর খয়ের খাঁ, চামচা-চাটুকারীতা করে তাদের স্বার্থ সিদ্ধির নিরিখে এমন কিছু করেছে, যা অশ্র“ বেদনার মহাকাব্য অগ্নিতে ঘৃতাগ্নি ও পেট্রোল ডালারই নামান্তর। তদোপরি অনেকেই তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা ও পদোন্নতির জন্য প্রভুকে তুষ্ট রাখার জন্য তোষামোদ ও চামচা-চাটুকারীতার মাধ্যমে কলাগাছকে বঠগাছ, গাধাকে হাতি ও তিলকে তাল বানাতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। এই শ্রেণীটার হাত থেকে যতদিন দেশের শাসন, প্রশাসন ও রাজনীতি মুক্ত না হবে ততদিন যেমনি অনৈক্যের সমাধান সুদুর পরাহত তেমনি সাম্য, শান্তি, স্বস্থি, নিরাপত্তাও পরাহত বলে দেশের জ্ঞানী, গুণী, বিদগ্ধজনরা মনে কর থাকে। এই লোভী স্বার্থপর চামচা-চাটুকার ও তোষামোদকারী শ্রেণীটার কথায় কর্ণপাত না করে দায়িত্বশীলরা যতদিন সচেতন ও আত্মপ্রত্যয়ী না হবে ততদিন বিভিন্ন সমস্যার সমাধান কাদাতে আটকে থেকে সামনে অগ্রসর না হয়ে পিচ্ছিল কাদাতেই আটকে থাকলে বলার কিছু হয়তো নাও থাকতে পারে। তবে হয়তো সমস্বরে বলা যাবে হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ। বলা যাবে, সোয়াচান পাখীরে আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইতাছনি। বলা যাবে অকূল দরিয়ার মাঝি তুমি কোথায় চলছ বাইয়া।

এ নিবন্ধে পরিশেষে একটি ঘটনা বলে শেষ করছি। বেশ কয়েক বছর আগে জেলার একজন নতুন বড় কর্মকর্তার যোগদান অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়ে উপস্থিত ছিলাম। সেখানে একজন বক্তা ওই নবনিযুক্ত কর্মকর্তার পরিচিত সভায় এমনভাবে তেল পালিশ করলেন, মনে হয়েছে তিনি স্বর্গ থেকে নিচে এসেছেন এমন কোনো মহানুভব ব্যক্তি। তাছাড়া এর আগে ব্রিটিশ পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে এমন কোনো গুণধর ব্যক্তি এ জেলায় আসেনি। তা শুনে সেই কর্মকর্তা বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, এত সব কিছু বাদ দিয়ে এলাকার উন্নয়ন ও জনগণের জন্য কি করণীয় তা বলুন। এমনিভাবে আমাকে নতুন অবস্থায় ফাঁপিয়ে ফুলিয়ে বেলুন বানাবেন না। তদোপরি চামচা চাটুকারদের কাছ থেকে যত দুরে থাকা যায় ততই মঙ্গল। এ কথাটি আজও ভুলা যায় না। যদিও চামচা-চাটুকারীতাবিহীন সেই ব্যক্তিটি স্বমহিমায় এখন অনেক বড় জায়গায় অবস্থান করছেন। এই নিবন্ধের সূত্রধরে পরিশেষে আবারও বলতে হচ্ছে জমিদার কৃষ্ট মোহন দাস চামচা-চাটুকারদের দ্বারা পরিবেষ্টিত না হলে যেমনি প্রজাদের এত কপোঘাতের শিকার হতে হত না, তেমনি ল্যাংটা বাবার ভুল পরামর্শে অনুপ্রানিত না হলে ল্যাংটা বাবার শিষ্যদের এত বিড়ম্বনার শিকার হতে হত না। তদোপরি সাংবাদিক আলমগীর স্বপনের নিবন্ধে উলে¬খিত গল্পের উপমা টেনে কাহাকেও বুঝার প্রয়োজন হয়তোবা হত না। ইতিহাসে গোয়েবলসের ঠিকানা আজ কোথায় তাও চামচা চাটুকারদের ভেবে দেখা দরকার। পড়ে দেখা দরকার ফেরাউন, নমরূদ, কারুনের উত্থান পতন ও জেনে রাখা ভালো হিটলার, মুসোলিনি, জার, চেংঘিস খান, হালাকু খান, নাদির শাহ, তৈমুর লং, চসেস্কু, চিয়াং কাইশাক, টিক্কা, ইয়াহিয়া জেনারেল নিয়াজির পরিণতির ইতিহাস। তাই হয়তোবা বিশ্ব বিজয়ী মহাবীর আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট মৃত্যুর আগে তার সহকর্মিদের বলেছিলেন “মৃত্যুর পর কফিনে আমার দুটি হাত বাহির করে জানাযা ও কবরে নিও। বিশ্ববাসী দেখুক খালি হাতে আমি দুনিয়া থেকে বিদায় নিচ্ছি।” তথ্যসূত্রে আরোও জানা যায় সহকর্মিদের নাকি বলেছিলেন কোনো কাপুরুষ, চামচা-চাটুকার যেন আমার কফিনের ধারে কাছেও না আসে।

(এ.কে.এম শামছুল হক রেনু)
লেখক কলামিষ্ট

Share this post