Tuesday, Apr 16th

Last update09:04:19 PM GMT

: শেষের পাতা খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সরকারি খরচে ইলেক্ট্রনিক হিসাবযন্ত্র বসানোর উদ্যোগ

খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সরকারি খরচে ইলেক্ট্রনিক হিসাবযন্ত্র বসানোর উদ্যোগ

E-mail Print PDF

nbr lgo kস্টাফ রিপোর্টার: ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লেনদেন তদারকিতে খরচে বসানো হচ্ছে বিশেষায়িত হিসাবযন্ত্র (ইএফডি)। ইতিমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ওই লক্ষ্যে আদেশ জারি করেছে। মূলত ১৩ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়ের হিসাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের পাশাপাশি কাক্সিক্ষত ভ্যাট আদায় করতেই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ওই ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সরকারি খরচে ১০ হাজার ইএফডি স্থাপন হবে। সেক্ষেত্রে বিগত ২০০৮ সালে চিহ্নিত হওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে ওই কার্যক্রম শুরু করা হবে। আগামী মাসে ওসব হিসাবযন্ত্র সরবরাহের লক্ষ্যে দরপত্র আহ্বান করা হবে। আর আগামী জানুয়ারি নাগাদ এনবিআর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তা স্থাপন করে কার্যক্রম শুরু করতে চাচ্ছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এক একটি ইএফডির দাম পড়তে পারে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ১০ হাজার ইএফডির জন্য সরকার মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করলেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে তা সরকারের জন্য বড় ধরনের ইতিবাচক ফল দেবে এনবিআর সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। ইএফডি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের জন্য আগামী মাসে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। ইএফডি ও এনবিআরে রক্ষিত সার্ভার স্থাপন ও ৫ বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা দেয়ার শর্ত দিয়েই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হবে। বিগত ২০০৮ সালে এনবিআরের মাঠপর্যায়ের অফিসগুলো জরিপ করে সাড়ে ৮ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছিল, যারা ইসিআর (ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার) মেশিন ব্যবহারের যোগ্য। পরে ওসব প্রতিষ্ঠানকে ইসিআর ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা দেয়া হলেও কার্যত কোনো ফল আসেনি। সেজন্য ওসব প্রতিষ্ঠানকে ইএফডি ব্যবহার নিশ্চিত করতে শুরুতে তাদের বিনামূল্যে ইএফডি মেশিন দেয়া হবে। তারপর থেকে যারা স্থাপন করবে, তারা কিনে নিতে হবে।
সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ সিটি করপোরেশন ও দেশব্যাপী জেলা শহরের ১৩ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ইএফডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে এনবিআর একটি আদেশ জারি করেছে। ফলে কয়েক লাখ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ওই যন্ত্রটি ব্যবহার করতে হবে। ১৩ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ফাস্ট ফুডের দোকান, মিষ্টান্ন ভা-ার, আসবাবপত্রের বিক্রয় কেন্দ্র, পোশাক বিক্রয় কেন্দ্র বা বুটিক শপ, বিউটি পার্লার, ইলেক্ট্রনিক বা ইলেকট্রিক্যাল গৃহস্থালি সামগ্রীর বিক্রয় কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার, অভিজাত শপিং সেন্টারের অন্তর্ভুক্ত সব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, জেনারেল স্টোর বা সুপারশপ, অন্যান্য বড় ও মাঝারি ব্যবসায়ী (পাইকারি ও খুচরা) প্রতিষ্ঠান এবং স্বর্ণকার, রৌপ্যকার ও স্বর্ণ এবং রৌপ্যের দোকানদার ও পাকাকারি। বিশেষায়িত হিসাবযন্ত্রটি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার না করলে কিংবা ব্যবহারে কোনো ধরনের ফাঁকি প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা গুণতে হবে।
সূত্র আরো জানায়, ইএফডি’র মূল বৈশিষ্ট্য হলো- সেটি এনবিআরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সার্ভারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকবে। যার নাম ইএফডি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা ইএফডিএমএস। যে কোনো বিক্রির তথ্য ইএফডিতে দেয়া হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা এনবিআরে রক্ষিত সার্ভারে দেখা যাবে। যন্ত্রটি ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে অনলাইন বা ইন্টারনেট ব্যবস্থা ও নির্ধারিত সিম থাকবে। প্রত্যেক বিক্রয় তথ্য অনুমোদিত কোডের জন্য এনবিআরে রক্ষিত সার্ভার বা ইএফডিএমএসে যাবে। তাৎক্ষণিক ইএফডিএমএস থেকে অনুমোদিত কোড পাওয়ার পর বিক্রয়ের লেনদেন কার্যকর হবে। একটি ইউনিক নাম্বারসহ চালান মুদ্রিত হবে। ওই চালানের কপি ক্রেতাকে দেয়া হবে এবং ওই নম্বর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও এনবিআরের সংরক্ষিত সার্ভারে থাকবে। ফলে প্রতিদিন কত বিক্রি হয়েছে এবং কত ভ্যাট আদায় হলো, তা এনবিআর জানতে পারবে।
এদিকে এনবিআর সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বলছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই যদি ভ্যাট ফাঁকিতে হাত মেলায়, তবে এই ব্যবস্থায়ও সুফল মিলবে না। কেননা ইএফডি বাদ দিয়ে হাতে হাতে লেনদেন হলে সেক্ষেত্রে ওই ফাঁকি ধরা কার্যত সম্ভব হবে না।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ মনে করছেন, এনবিআরের সক্ষমতা তৈরির আগে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া ঠিক হবে না।
এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের ভ্যাট বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক ও ব্যবসায়ী নেতা আব্দুর রাজ্জাক জানান, এনবিআরের বিদ্যমান আইন ও বিধি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন, ভ্যাট সংক্রান্ত বিষয়ে সক্ষমতা ও ব্যবসায়ীদের যথাযথ প্রশিক্ষণের আগে ইএফডি চালু করা ঠিক হবে না।

Share this post