Thursday, Apr 25th

Last update09:04:19 PM GMT

: সম্পাদকীয় রাজস্ব আহরণে দুর্বলতা

রাজস্ব আহরণে দুর্বলতা

E-mail Print PDF

রাষ্ট্রের করণীয় কাজের তালিকায় রয়েছে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জননিরাপত্তা প্রদান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, রাস্তাঘাট ও জনপরিবহনের ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান ইত্যাদি। উপযুক্ত পরিকল্পনার মাধ্যমে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্বও রাষ্ট্রের। এজন্য রাষ্ট্রের বিপুল অর্থের প্রয়োজন হয়। সাধারণত কাস্টমস, ভ্যাট ও ট্যাক্সের মাধ্যমে রাষ্ট্র এই অর্থ সংগ্রহ করে। উন্নত দেশগুলোতে নাগরিকরা উন্নত সেবা পাওয়ার লক্ষ্যে অনেক বেশি কর দিয়ে থাকে এবং কর প্রদানকে তারা নাগরিক দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করে। আমাদের মতো দেশগুলোতে করের পরিমাণ যেমন কম, কর প্রদানের হারও কম। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে কর প্রদানের যোগ্য দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ কর দেয় না। যারা দেয় তারাও কম দেয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশে কর আদায়ের হার সবচেয়ে কম। আমাদের তুলনায় অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা নেপালেও কর আদায় তুলনামূলকভাবে বেশি। সংগত কারণেই আমাদের নাগরিক সেবা প্রাপ্তিও আশানুরূপ হয় না।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে কর আদায়ের এই পশ্চাৎপদতার জন্য অনেক কারণকে দায়ী করেন। এর মধ্যে প্রথমেই আসে রাজস্ব বিভাগের দুর্বলতা। আয়কর আদায়ের ক্ষেত্রে চাকরিজীবী ছাড়া আর কারো কাছে তারা সঠিকভাবে পৌঁছতেই পারে না। ঢাকায় বা বড় শহরগুলোতে বহু বাড়ির মালিক আছেন, যাঁদের ৮-১০টি করে ফ্ল্যাট রয়েছে, প্রতি মাসে লাখ টাকার ওপরে আয় করেন, তাঁদের বড় অংশই আয়কর দেয় না। আবার সেই বাড়িতে ভাড়াটে হিসেবে যিনি চাকরিজীবী থাকেন, যাঁর মাসিক আয় ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা, বেতনের অর্ধেকই দিয়ে দেন বাড়িভাড়ায়, তাঁকে ঠিকই কর পরিশোধ করতে হয়। এ ধরনের বৈষম্য বিদ্যমান থাকলে যাঁরা বাধ্য হন আয়কর দিতে তাঁরা নিজেদের বঞ্চিত ভাবেন এবং কর প্রদানে নিরুৎসাহ হন। একইভাবে চিকিৎসক, আইনজীবী, স্থপতি, প্রকৌশলীসহ যেসব পেশায় স্বাধীনভাবে উপার্জনের সুযোগ রয়েছে, তাদেরও করজালের আওতায় আনা জরুরি। কর আদায় কম হওয়ার আরেকটি বড় কারণ রাজস্ব আদায়কারীদের দুর্নীতি। তারা কর প্রদানকারীর কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে রাষ্ট্রের করভা-ারের ক্ষতি করে। কর আদায়ে জটিল পদ্ধতি অনুসরণ, করদাতাদের হয়রানি করাসহ অন্যান্য কারণও কর প্রদানে মানুষকে নিরুৎসাহ করে। ফলে প্রতিবেশী দেশ ভারতে যেখানে কর প্রদানকারী মানুষের সংখ্যা জনসংখ্যার ১৮ শতাংশের ওপর, সেখানে আমাদের কর প্রদানকারীর সংখ্যা মাত্র ৯ শতাংশের মতো।
কর প্রদানে মানুষের অংশগ্রহণ স্বতঃস্ফূর্ত করার লক্ষ্যে তাদের কাছে যেতে হবে, তাদের বোঝাতে হবে। যাঁরা কর দেন, তাঁদের ওপরই শুধু করের বোঝা না বাড়িয়ে করজালের আওতা বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রীয় সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে করদাতাদের অতিরিক্ত সুবিধা নিশ্চিত করাসহ অন্যান্য সুবিধা দিয়ে কর প্রদানে মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে।

Share this post