Wednesday, May 01st

Last update09:04:19 PM GMT

: প্রথম পাতা সীমাবদ্ধতায় কর্মসংস্থান ও উৎপাদনে পিছিয়ে পড়ছে বিসিক শিল্পনগরীগুলো

সীমাবদ্ধতায় কর্মসংস্থান ও উৎপাদনে পিছিয়ে পড়ছে বিসিক শিল্পনগরীগুলো

E-mail Print PDF

bscic-20210326202958এক্সক্লুসিভ: নানা সীমাবদ্ধতায় কর্মসংস্থান ও উৎপাদনে পিছিয়ে পড়ছে বিসিক শিল্পনগরীগুলো। দেশে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) ৭৯টি শিল্পনগরী রয়েছে। এসব শিল্পনগরীতে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশব্যাপী আঞ্চলিকভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি কার্যক্রম বাড়াতে স্থাপিত এসব শিল্পনগরীর মধ্যে মাত্র কয়েকটি কার্যকর। মূলত তিনটি বিসিক নগরীতেই মোট কর্মসংস্থানের ৬০ শতাংশ। বিগত ১৯৬০ সালে দেশব্যাপী বিসিকের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম কার্যক্রম শুরু হওয়া বিসিকের মধ্যে রয়েছে বরিশাল শিল্পনগরী। তারপর ১৯৬১ সালে রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনা, পিরোজপুর (স্বরূপকাঠি) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬২ সালে চালু হয় যশোর, দিনাজপুর, পাবনা, ফেনী বিসিক শিল্পনগরী। ১৯৬৩ সালে কুষ্টিয়া, ১৯৬৪ সালে রাজবাড়ী, বগুড়া ও টঙ্গী, ১৯৬৭ সালে রংপুর এবং ১৯৬৮ সালে ময়মনসিংহ বিসিকের কার্যক্রম শুরু হয়। তবে প্রথম দিককার টঙ্গী ছাড়া প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে বাকি বিসিক শিল্পনগরীগুলো। বিসিক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিসিকের ৭৯টি শিল্পনগরীতে মোট ৬ লাখ ২৯ হাজার ৭০৬ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় হোসিয়ারি বিসিকে কর্মসংস্থান হয়েছে সর্বোচ্চ ২ লাখ ২৯ জনের। এ ছাড়া দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্পনগরীতে কর্মসংস্থান ৯৫ হাজার এবং তৃতীয় অবস্থানে থাকা টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরীতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫৪ হাজার। অর্থাৎ ৮০টি বিসিক শিল্পনগরীর মধ্যে তিনটিতে মোট কর্মসংস্থান দাঁড়াচ্ছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার জন, যা মোট কর্মসংস্থানের ৬০ শতাংশ। ৫৮ দশমিক ৫২ একর জমির নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারি শিল্পনগরীতে শিল্প প্লটের সংখ্যা ৭৪১টি। বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৭৪০টি। বরাদ্দকৃত প্লটে ৪২৯টি শিল্প ইউনিটের মধ্যে ৪২০টি উৎপাদনরত, তিনটি বাস্তবায়নাধীন ও ৬টি শিল্প ইউনিট রুগ্ন অবস্থায় রয়েছে। ওই শিল্পনগরীতে সর্বোচ্চ ২ লাখ ২৯ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। ১ লাখ ১৩ হাজার পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি কাজ করেন ১ লাখ ১৬ হাজার নারী শ্রমিক। সূত্র জানায়, ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রামের কালুরঘাট বিসিক শিল্পনগরীতে ৭১টি শিল্প প্লটের মধ্যে ৩২টি শিল্প ইউনিট থাকলেও রুগ্ন রয়েছে ৬টি। তাতে কাজ করেন ১৫ হাজার শ্রমিক (৬ হাজার ৫০০ পুরুষ ও ৮ হাজার ৫০০ নারী শ্রমিক)। ১৯৯০ সালে একই স্থানে কালুরঘাট শিল্পনগরী সম্প্রসারণ করে ২৫৫ প্লটে ১২৭টি শিল্প ইউনিট স্থাপন করা হয়। তাতে ১৪টি শিল্প ইউনিট রুগ্ন অবস্থায় থাকলেও ১১৩টি উৎপাদন রয়েছে। সেখানে কাজ করেন ৮০ হাজার শ্রমিক, যার মধ্যে ৩০ হাজার ৯০০ পুরুষ ও ৪৯ হাজার ১০০ নারী শ্রমিক। টঙ্গীতে ২১৪ প্লটে ১৬৫টি শিল্প ইউনিট রয়েছে, যার মধ্যে ১৩৬টি উৎপাদন থাকলেও রুগ্ন রয়েছে ২৫টি এবং বাস্তবায়নাধীন চারটি ইউনিট। সেখানে ৫৪ হাজার শ্রমিকের মধ্যে নারী ৩৩ হাজার ও পুরুষ শ্রমিক ২১ হাজার। সূত্র আরো জানায়, যন্ত্রপাতির সক্ষমতা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনে ব্যর্থতা, আর্থিক সংকট, কাঁচামালের সংকট, দক্ষ শ্রমিকের সংকট, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব, বৃহৎ শিল্পের সঙ্গে পণ্য বিপণনে পিছিয়ে পড়া, অবকাঠামোগত সংকট, উৎপাদনরত শিল্প প্লটের ভ‚মিস্বল্পতা, পানি ও ইউটিলিটি সমস্যা, নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় ঝুঁকি, ক্ষুদ্র শিল্পগুলোর ঋণপ্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতার কারণে বিসিক শিল্পনগরীগুলো পিছিয়ে পড়ছে। এ ছাড়া পুরনো শিল্পোদ্যোক্তাদের মৃত্যুর পর অংশীদারি সমস্যা, মামলা জটিলতা, মূলধন হারিয়ে ঋণখেলাপি হওয়ার কারণেও শিল্পনগরীগুলো সংকটের মধ্যে রয়েছে। ওসব সংকট উত্তরণে বিসিকের পক্ষ থেকে একাধিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর সমস্যা সমাধানের বিষয়টি সময়সাপেক্ষ হওয়ায় নতুন প্রস্তাবিত শিল্পনগরীগুলোকে সঠিক পন্থায় স্থাপনের দিকেই মনোযোগ বাড়াচ্ছে বিসিক। এদিকে বিসিক সংশ্লিষ্টদের মতে, বিসিক দেশের শিল্প খাতের বিকাশে দশকের পর দশক ধরে অবদান রেখে যাচ্ছে। বিসিকের বিদ্যমান সমস্যাগুলো উত্তরণের জন্য এরইমধ্যে একাধিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশব্যাপী সড়ক, সেতুসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণকাজ হওয়ায় পুরনো ও রুগ্ন শিল্পনগরীগুলোও নতুন করে সাজানো হচ্ছে। যার কারণে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামমুখী দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের কর্মমুখী মানুষ এসব শিল্পনগরীর মাধ্যমে দেশের শিল্প খাতের বিকাশে ভ‚মিকা রাখতে পারবে। বর্তমানে বিসিক শিল্পনগরীগুলোয় মোট প্লটের সংখ্যা ১০ হাজার ৮৮৮টি। তার বরাদ্দ দেয়া ১০ হাজার ২৫৯টি প্লটে শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ৫ হাজার ৮৯৯। যদিও উৎপাদনে রয়েছে ৪ হাজার ৫৭০টি কারখানা। এর মধ্যে ৯০১টি কারখানা রপ্তানিমুখী। প্রতি বছর শিল্পনগরীর কারখানাগুলো ১ হাজার ৩০০ থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার শুল্ককর পরিশোধ করে। সার্বিক বিষয়ে বিসিকের মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) ড. মো. ফরহাদ আহম্মেদ জানান, বিসিক স্বয়ংসম্পূর্ণ শিল্প খাতের বিকাশ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও স্থানীয় পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে দেশব্যাপী শিল্পনগরী স্থাপনের কাজ করে যাচ্ছে। ষাটের দশকের আগে স্থাপন হওয়া বেশকিছু শিল্পনগরী সম্ভাবনাময় হলেও সেগুলো সফল না হওয়ার বিষয়টি সত্য। ওই সময় শিল্পনগরী স্থাপনের ক্ষেত্রে একাধিক সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। তাছাড়া রুগ্ন ও পিছিয়ে থাকা শিল্পনগরীগুলোকে কার্যকর পর্যায়ে নিয়ে যেতে বিসিক একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে। বিসিকের বর্তমান কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বিসিক দেশের শিল্প খাতের বিকাশে হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে।

Share this post