Saturday, May 18th

Last update09:04:19 PM GMT

: সম্পাদকীয় নতুন মাদক খাত

নতুন মাদক খাত

E-mail Print PDF

গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয় মাদকবিরোধী অভিযান। শুরুতে ব্যাপক সাড়া ফেললেও উল্লেখযোগ্য অর্জন নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবসের প্রাক্কালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, মাদক কারবার পুরোপুরি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান চলবে। সরকারের পক্ষ থেকে সব সময় জানানো হয়েছে, তালিকা ধরে ধরে অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু অভিযানে এখন পর্যন্ত শীর্ষ মাদক কারবারিদের আটক হওয়ার খবর খুব একটা পাওয়া যায়নি। সীমান্ত এলাকায় কিছুদিনের জন্য মাদক চোরাচালানে ভাঁটা পড়লেও একেবারে বন্ধ করা যায়নি মাদক কারবার। নতুন নতুন রুটে মাদক আসছে দেশে। আসছে নতুন নতুন মাদকও। বাংলাদেশ কিছু মাদক চোরাচালানের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ হচ্ছে নতুন মাদক ‘খাত’। গ্রিন টি-র মতো দেখতে এই মাদক সেবনও করতে হয় চায়ের মতো করে। ইথিওপিয়া থেকে বাংলাদেশে এসে এখান থেকে বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ‘খাত’ নামের নতুন এই মাদক। গত ৩১ আগস্ট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দারা ৪৬৮ কেজি ‘খাত’ আটক করে। একই দিন শান্তিনগর থেকেও উদ্ধার করা হয় ‘খাত’। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় চার টন ‘খাত’ উদ্ধার করা হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে ধারণা করা যেতে পারে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি ‘খাত’ সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাদকটি বাংলাদেশে আসছে, চালান হচ্ছে বিদেশে। ইথিওপিয়া থেকে আসা ‘খাত’ মাদকে গ্রিন টি-র লেবেল লাগিয়ে রপ্তানি করা হয়। গোয়েন্দারা এরইমধ্যে ৩৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম পেয়েছে, যারা সরাসরি ‘খাত’ সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত।
নতুন মাদক ‘খাত’ উদ্ধারের সংবাদে এটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে দেশে মাদক কারবারি সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানকে একেবারেই তোয়াক্কা করছে না তারা। অল্প সময়ে বেশি লাভ হয় বলেই সমাজের জন্য ক্ষতিকর এই কারবারের দিকে ঝুঁকছে অনেকে। ফলে দেশে মাদকসেবীর সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। শুধু তরুণ-যুবকরাই নয়, কিশোররাও মাদকের দিকে ঝুঁকছে। একবার যারা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে তারা আর তা থেকে মুক্ত হতে পারে না। মাদকের অপব্যবহার শুধু মাদকেই সীমিত থাকে না, আরো বহু অপরাধের কারণ হয়। অন্যদিকে মাদকসেবীরা যেমন পরিবারের জন্য, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এভাবে চলতে থাকলে সমাজ ক্রমেই পঙ্গু হয়ে যাবে, সব ধরনের উন্নয়ন প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই দেশের বৃহত্তর স্বার্থে মাদকবিরোধী অভিযান আরো জোরদার করতে হবে। ‘খাত’সহ সব ধরনের মাদক চোরাচালান বন্ধে জোরদার ব্যবস্থা নিতে হবে।

Share this post