Sunday, May 05th

Last update09:04:19 PM GMT

: শেষের পাতা ঢাকা-চট্টগ্রামে অবৈধ ভিওআইপির ৪২ হাজার সিমকার্ড জব্দ, কোটি টাকার সরঞ্জাম উদ্ধার

ঢাকা-চট্টগ্রামে অবৈধ ভিওআইপির ৪২ হাজার সিমকার্ড জব্দ, কোটি টাকার সরঞ্জাম উদ্ধার

E-mail Print PDF

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে অবৈধ ভিওআইপি অভিযানে ৪২ হাজার ১৫০টি সিমকার্ডসহ এক কোটি ২৩ লাখ টাকার সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ( র‌্যাব)। এ সময় ২৪ জনকে আটক করা হয়েছে। বিটিআরসি এবং র‌্যাব গত ১৪ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২৬টি আবাসিক স্থাপনায় অভিযান পরিচালনা করে। গতকাল রোববার রমনায় বিটিআরসি সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক জানান, ১৪-১৮ অক্টোবর রাজধানীর ধানমন্ডি, তেজগাঁও, কদমতলী, সিদ্ধিরগঞ্জ, পল্লবী ও মিরপুর এবং ২১-৩১ অক্টোবর চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী, পাঁচলাইশ, বাকলিয়া, চকবাজার, চান্দগাঁও, সদরঘাট ও হালিশহর এলাকায় অভিযান চালানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অভিযানে রবির ১৬ হাজার ৮১২টি, টেলিটকের ১৫ হাজার ৯৩৯টি, বাংলালিংকের ছয় হাজার ১৭৬টি, গ্রামীণফোনের তিন হাজার ২২৩টি সিমসহ মোট ৪২ হাজার ১৫০টি সিম জব্দ করা হয়। এছাড়া অবৈধ ভিওআইপি কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের সিম পোর্ট বিশিষ্ট মোট ১৪৮টি জিএসএম (সিমবক্স) গেটওয়ে, দুই হাজার ৬৭৭টি মডেম ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক মালামাল জব্দ করা হয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য এক কোটি ২৩ লাখ ২৩ হাজার টাকা। সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, অবৈধ কারবারে জড়িত থাকায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট থানায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০১ এর অধীনে ২৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিটিআরসি চলমান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তায় বর্তমানে এ-সংক্রান্ত অবৈধ কার্যক্রমে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত সিমবক্সের সুনির্দিষ্ট স্থান (পিন পয়েন্ট) শনাক্তকরণে সক্ষমতা অর্জন করেছে। এতে সাম্প্রতিক অভিযান গুলোতে অতীতের চেয়ে অধিকতর সফলতা অর্জিত হচ্ছে। এসব অভিযান থেকে প্রতীয়মান হয়েছে যে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের অপারেশনে যে পরিমাণ অবৈধ যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে এর মাধ্যমে দেশের বার্ষিক ৮৬৭ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হতো।

ক্ষুব্ধ বিটিআরসি: অপব্যবহার রোধে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন চালুর পরও কিভাবে মোবাইল ফোনের সিম অবৈধ ভিওআইপির ব্যবসায় যাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অপারেটরদের কাছ থেকে সন্তোষজনক জবাব না পেয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছে বিটিআরসি। মোবাইল সিমের বিক্রি ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে অপাটেরগুলোকে সতর্ক করেছে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিটিআরসি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক এ কথা বলেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অপারেটরদের ব্লেইম দেওয়ার জন্য এ সংবাদ সম্মেলন না। একটি সিম কোথায় যায় তার দায়দায়িত্ব অপারেটরদের। ডিস্ট্রিবিউটরদের নজরে রাখেন। যদি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তাহলে আইন প্রয়োগ করতে বাধ্য হব, এতে অপারেটরদের ক্ষতি হবে আপনারাই জানেন। ডিস্ট্রিবিউটররা কাজ করছে, আপনার বলছেন লাভ হচ্ছে না। লাভ না হলে কেন করছে? অপারেটরদের দায়ী করতে চাচ্ছি না, অপারেটররা সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে বলে আশা করি। বিটিআরসি যাওয়ার আগেই অপারেটররা ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করি। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধন শুরু হলেও অপারেটরদের কাছ থেকে কিভাবে এসব সিম ভিওআইপিতে যাচ্ছে, এমন প্রশ্নে গ্রামীণফোনের প্রতিনিধি ইমতিয়াজ শফিক বলেন, বিটিআরসির প্রক্রিয়া অনুযায়ী সিম বিক্রি করি, সেটার বাইরেও অবৈধ ভিওআইপি বন্ধে কাজ করা হয়। নিজেদের সেলফ রেগুলেশনও করা হয়। কোন ব্যক্তি সিম নিয়ে কোন কাজে ব্যবহার করবে, তা ব্যক্তিগতভাবে করে বা অবৈধভাবে ব্যবহার করে থাকে। তবে সব সময় নজরদারি করা হয়। টেলিটকের প্রতিনিধি সাইফুর রহমান বলেন, সিম সাবস্ক্রাইবারের কাছে গেলে তা তিনি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করেন। টেলিটকের সিমের দাম বা টকটাইম অনেক কম হওয়ায় ব্যবহার হতে পারে। রবির প্রতিনিধি আশিকুর রহমান বলেন, আমাদের লক্ষ্য থাকা উচিত কেমন করে এই অপরাধ কমানো যায় এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা যায়। সিম পর্যবেক্ষণ করার অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এখন বিটিআরসির কাছে আছে। বাংলাদেশে ভিওআইপি বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে অজুহাত দেওয়া এখন অমূলক হবে। প্রতি ভিওআইপি কলে মোবাইল কোম্পানিগুলো প্রায় ৩০ পয়সা করে হারায়। আমাদের নিজেদের উপকারেই আমরা চাই দেশ থেকে ভিওআইপি নির্মূল করা হোক। বাংলালিংকের প্রতিনিধি আবরার বলেন, অবৈধ ভিওআইপি প্রতিরোধে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছি। পরে বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তফা কামাল (ইঞ্জিনিয়ারিং ও অপারেশন্স) অপারেটরদের উদ্দেশ্য বলেন, কারো উত্তর সন্তোষজনক নয়। সিমের সাথে ব্যবহারের কোনো নিয়ম নেই, বায়োমেট্রিকের পরে কিভাবে হল, এটি আরো তদন্তের দাবি রাখে। অপারেটররা এ বিষয়ে সচেতন নয়, সিম নিয়ে কি হচ্ছে তাদের দায়-দায়িত্বের মধ্যে। রিটেইলার ও ডিস্ট্রিবিউটরদের বিষয়ে তারা কোনো তদন্ত করেনি। আগামীতে বিটিআরসির মামলার সাথে মানি লন্ডারিং মামলাও হবে। তথ্য আছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যারা কাজ করে তাদের অবৈধ ভিওআইপির মাধ্যমে টাকা উপার্জন করা সহজ কাজ। অপারেটরদের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। ভিওআইপির কারণে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, এক লাখ সিম ১৬ ঘণ্টা করে অবৈধ ভিওআইপিতে ব্যবহার হলে বছরে ছয় থেকে সাত হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সরকারের প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। আরেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ (স্পেকট্রাম) বলেন, ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক কল ছিল ৭০ মিলিয়ন তা এখন ৩৫ মিলিয়নে নেমেছে। যে পরিমাণ ধরা পড়েছে আর যে পরিমাণ হচ্ছে তার পার্থক্য অনেক। সিমটা অপারেটরদের প্রডাক্ট, প্রডাক্ট মার্কেটে ডিস্ট্রিবিউটার চ্যানেলে যাচ্ছে, ডিস্ট্রিবিউটারের ওপর অপারেটরদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বিটিআরসি এ ধরনের অনেক সিমের তথ্য অপারেটরদের দিলেও তারা সে বিষয়ে কোনো তদন্ত করেনি। অপারেটরদের দেখতে হবে কিভাবে কোন পয়েন্ট থেকে এ সিমগুলো গেছে, তা রিপোর্ট করা প্রয়োজন। অবৈধ ভিওআইপির পেছনে কারা রয়েছে এমন প্রশ্নে বিটিআরসি প্রধান জহুরুল হক বলেন, খুব প্রভাবশালী করে তা নয়, অন্তরালে তারা কাজ করে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে অভিযান চললেও প্রবণতা কমছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রবণতা কমছে না, তা নয়। অভিযান চলছে বলে কমছে তবে এ ধরনের প্রযুক্তিরও প্রসার ঘটছে। সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, অভিযানে সম্পৃক্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটরস ফোরাম (আইওএফ) ও বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Share this post