Friday, May 03rd

Last update09:04:19 PM GMT

: শেষের পাতা নির্বাচনের আগে সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর কারসাজি ঠেকাতে বিশেষ উদ্যোগ

নির্বাচনের আগে সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর কারসাজি ঠেকাতে বিশেষ উদ্যোগ

E-mail Print PDF

স্টাফ রিপোর্টার: আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর কারসাজি ঠেকাতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেজন্য সরকারি বিভিন্ন সংস্থা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করার পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের দিকেও তীক্ষè নজর রাখবে। দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর কারসাজির কোন প্রমাণ পাওয়া গেলে দোষীদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। বর্তমানে দেশে খাদ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ করা হয়েছে। শুধু সরকারি গুদামে এ মুহূর্তে ১৪ লাখ টন চাল ও গম মজুদ রয়েছে। আর বেসরকারি খাতে খাদ্যপণ্যের মজুদ অন্য যে কোন সময়ের চেয়েও বর্তমানে বেশি রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ, ঢাকার মৌলভীবাজার ও নারায়ণগঞ্জ বন্দরকেন্দ্রিক ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র রয়েছে। যে কোন বিশেষ মুহূর্তে ওই চক্রটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। নির্বাচন সামনে রেখে জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে পারে এ ধরনের একটি আভাস পাওয়ার পর সরকারি সংস্থাগুলোর তৎপরতা বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পণ্যের দাম বাড়বে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, এ বছর আন্তর্জাতিক মার্কেটে খাবারের দাম সবচেয়ে কম ও নি¤œমুখী ধারায় রয়েছে। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎপাদনও ভাল অবস্থায় রয়েছে। তারপরও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খাদ্যনিরাপত্তা বলয় সুদৃঢ় করতে সমন্বিত কার্যক্রম চালাচ্ছে ১০টি মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে দেশে ধান ও গমের পাশাপাশি আমদানিনির্ভর ১৭টি পণ্যের মজুদ বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া আমন ধান কাটা শুরু হওয়ায় চালের দাম ইতিমধ্যে কমতে শুরু করেছে। তাছাড়া আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচনকালীন সময়েও বাজারে পর্যাপ্ত শীতকালীন সবজি থাকবে। পাশাপাশি নদী ও সাগরে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। তাছাড়া এ বছর দেশীয় মাছের রেকর্ড উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র জানায়, আগামী ৩ মাসের মধ্যে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার কোন আশঙ্কা নেই। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কমে এসেছে। পাশাপাশি আমদানিনির্ভর পণ্য দ্রুত দেশে নিয়ে আসতে ঋণপত্র এলসি সহজীকরণ এবং বন্দরে দ্রুত পণ্য ছাড়ানোর জন্য সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। দেশে এ মুহূর্তে শতভাগ আমদানিনির্ভর পণ্য হচ্ছে ৪টি। সেগুলো হলো লবঙ্গ, এলাচি, জিরা ও পামওয়েল। তাছাড়া চাহিদা মেটাতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে দারুচিনি, সয়াবিন, ছোলা, চিচি, পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, শুকনো মরিচ, ধনিয়া, আদা, হলুদ, তেজপাতা ও খাদ্য লবণ আমদানি করা হয়ে থাকে। দেশে আমদানিকৃত ওসব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। খুচরা বাজারে এখন আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ জাত ও মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ এবং দেশীটি ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আগামী এক মাসের মধ্যে দেশীয় নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসবে বাজারে। তাছাড়া দেশে ভোজ্যতেল, মসুর ডালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। চিনির দাম আরো কমেছে। এখন প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫২ টাকায়।
সূত্র আরো জানায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ চালের বাজার স্বাভাবিক এবং জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার লক্ষ্যে ৩টি বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রথমত, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ী নেতাসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে নিয়মিত মতবিনিময় সভা করা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও দেশীয় চাহিদা নির্ণয়, স্থানীয় উৎপাদন, মজুদ পরিস্থিতি ও আমদানির পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে যে কোন পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করার অপচেষ্টা রোধ করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে সব জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গঠিত দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল সর্বদা বাজার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। ওই সেলটি প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন, টিসিবি এবং কৃষি বিপণন অধিদফতর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে থাকে।
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী গত ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত খাদ্যশস্যের সরকারি গুদামজাতকৃত মোট মজুদ ১৪ লাখ টন। তার মধ্যে চাল ১১ দশমিক ৩ এবং ২ দশমিক ৭ লাখ টন গম রয়েছে। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণে ১০টি মন্ত্রণালয় যথাক্রমে- কৃষি, খাদ্য, দুর্যোগ ও ত্রাণ, মৎস্য, পানি, স্থানীয় সরকার, মহিলা বিষয়ক, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে কাজ করা হচ্ছে। দেশে এ মুহূর্তে মোটা চালের পাইকারি দাম ৩৪-৩৫ টাকা এবং ওই চাল খুচরা বাজারে ৩৮-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া ২৬-২৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি আটা। বাজারে এ মুহূর্তে ভালমানের স্বর্ণা ও চায়না ইরি চাল ৪০-৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জানান, বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের সরবরাহ দেশজ উৎপাদন ও আমদানির দুইয়ের ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে ওসব পণ্যের দাম উঠানামা করলে দেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়ে। তবে এ বছর আমদানি ভাল পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা যায় খাদ্যপণ্যের উৎপাদনও ভাল হবে। ওই কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। আর ভোগ্যপণ্য নিয়ে যদি কোন ব্যবসায়ী কারসাজি করে থাকে তবে তাদের শাস্তির আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দেয়া উচিত। এ ব্যাপারে সরকারকে সহযোগিতা দিতে এফবিসিসিআই প্রস্তুত রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব শুভাশিষ বসু জানান, দেশে এ মুহূর্তে চাহিদার তুলনায় বেশি ভোগ্যপণ্যের মজুদ রয়েছে। শীতকালীন সবজিতে ভরে উঠছে বাজার। তাই আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কোন আশঙ্কা নেই। তারপরও নির্বাচন সামনে রেখে সরকারি সংস্থাগুলোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কোন ধরনের কারসাজির প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।

Share this post