Tuesday, May 21st

Last update09:04:19 PM GMT

: সম্পাদকীয় সড়কে বিশৃঙ্খলা

সড়কে বিশৃঙ্খলা

E-mail Print PDF

ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি
পরিকল্পিত নগরীর মানদÐ অনুযায়ী একটি শহরের আয়তনের কমপক্ষে ২৫ ভাগ সড়ক থাকা জরুরি হলেও ঢাকা শহরে এর পরিমাণ মাত্র ৭ ভাগ। এ প্রেক্ষাপটে রাজধানীর সড়ক ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটা প্রত্যাশিত হলেও বাস্তব পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। দুঃখজনক হলো, রাজধানীর প্রায় সব সড়কেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশ্বের প্রায় সব বড় শহরে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা থাকলেও আমাদের দেশে খোদ রাজধানীর সিংহভাগ সিগন্যালই পুলিশের হাতের ইশারায় পরিচালিত হয় এখনো। রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সংকেত বাতি স্থাপন করা হলেও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কয়েক মাসের মধ্যেই অধিকাংশ বাতি অকেজো হয়ে পড়ে। জানা যায়, রাজধানী ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের ঋণে ৪২৫ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে ‘নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেস)’ প্রকল্প। কিন্তু দুই সিটি করপোরেশনের রাস্তায় অকার্যকর হয়ে আছে অটো সিগন্যাল ও সোলার সিস্টেম। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে ফুটপাত ও ফুট ওভারব্রিজের কার্যকর ব্যবহারও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি মূল প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত সময় ও ব্যয় বেড়েছে। স¤প্রতি প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়ন করে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এমন চিত্রই পেয়েছে। জানা যায়, সড়কের অটো কন্ট্রোল ট্রাফিক সিস্টেম চালু নেই বহু জায়গায় এবং অনেক জায়গায় সৌরবিদ্যুৎও অকার্যকর। ফুট ওভারব্রিজগুলো অবৈধ হকারদের দখলে থাকায় জনগণের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। কোনো কোনো ফুট ওভারব্রিজে সিঁড়ির উচ্চতা বেশি হওয়ায় বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের ওঠানামা করতে অসুবিধা হচ্ছে। ফুটপাত ও সড়ক অবৈধ দখলের কারণে যানজট সৃষ্টির বিষয়টিও বহুল আলোচিত। কর্তৃপক্ষকে মনে রাখতে হবে, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাÐে সময় ও অর্থের অপচয় হলেও দেশে সম্পদ সৃষ্টি হয় না। প্রতিটি উন্নয়ন কর্মকাÐের মাধ্যমে দেশে যাতে সম্পদ সৃষ্টি হয় সেদিকেও কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। বহু গণপরিবহণ চালক অর্থলোভে মেতে ওঠেন বেপরোয়া প্রতিযোগিতায়। সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির চালকরাও দায়ী। বহু পথচারী ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পারাপারের চেষ্টা করে থাকে; অনেকে শৃঙ্খলা মানেন না। মোটকথা, কেউই যেন সড়কের শৃঙ্খলা মানতে চায় না। রাজধানীর বিশৃঙ্খলা দূর করতে এবং যানজট কমাতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো কেন কাজে লাগেনি তা খতিয়ে দেখা দরকার। রাজধানীর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ বিভিন্ন গন্তব্যে হেঁটে চলাচল করলেও শহরের বহু এলাকায় পথচারীবান্ধব অবকাঠামো নেই। সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির এটিও একটি বড় কারণ। অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফুট ওভারব্রিজ কিংবা জেব্রাক্রসিং নেই; থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে কিনা অর্থাৎ পথচারীরা ব্যবহার করছেন কিনা, সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নজরদারিও দৃশ্যমান নয়। সড়কে নিয়ম মেনে চলাচলের বিষয়ে যেমন জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন, তেমনি যানবাহন চালকরা প্রশিক্ষিত কিনা, সেটিও দেখভাল করা জরুরি। রাজধানীসহ সারা দেশের সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন পরিকল্পনা ও বিপুল বাজেট বরাদ্দই যথেষ্ট নয়; প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়নে যাতে কোনো রকম দুর্নীতি না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। রাজধানীর সড়কের বিশৃঙ্খলা দূর করতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

Share this post