Wednesday, May 01st

Last update09:04:19 PM GMT

: সম্পাদকীয় বর্ষার দূত কদম ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য

বর্ষার দূত কদম ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য

E-mail Print PDF

প্রকাশ ঘোষ বিধান
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি বাংলাদেশ। ষড়ঋতুর বর্ষা এক অনন্য ঋতু। বর্ষার আগমনকে স্বাগত জানায় কদম ফুল। গোলাকার সাদা হলুদ রঙে মিশ্রিত ফুলটি দেখতে যেন ভোরের উষা। রূপসী তরুর অন্যতম রূপবতী হলো কদম ফুল। কদম ফুলের সৌন্দর্য্যে বিমোহিত হন না এমন বেরসিক মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। বর্ষায় প্রেমিকার মনোরঞ্জনে কদমের জুড়ি নেই। বর্ষার প্রকৃতি বাংলা সাহিত্যে এনে দিয়েছে স্নিগ্ধতা। বর্ষার উপহার সোনা রঙের কদম ফুল নিয়ে রচিত হয়েছে নানা গল্প, উপন্যাস, কবিতা আর গান।
বর্ষায় ফুলের রানি কদম। গাছে গাছে সবুজ পাতার ডালে গোলাকার মাংসল পুষ্পাধার আর তার থেকে বের হওয়া সরু হলুদ পাপড়ির মুখে সাদা অংশ কদমকে সাজিয়ে তুলেছে ভিন্নভাবে। গোলাকার হলদে-সাদা মিশ্রিত ফুলটি দেখতে যেন ভোরের উষা। বর্ষার মেঘের সঙ্গে মিতালি বলেই কি না, এর আরেক নাম মেঘাগমপ্রিয়। আর নারীর সৌন্দরে‌্যর সঙ্গে তুলনা করে অনেকেই বলে ললনাপ্রিয়। এ ছাড়া সুরভি, প্রাবৃষ্য, বৃত্তপুষ্প, সিন্ধুপুষ্প, কর্ণপূরক, ভৃঙ্গবল্লভ, মঞ্জুকেশিনী প্রভৃতি নামেও কদমের পরিচিতি আছে। এত এত ভিন্নতার ছোঁয়াতে কদম হয়ে উঠেছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য। আষাঢ়ে বাদলের দিনে আগমন ঘটেছে হৃদ্মোহিনী কদম ফুলের। তাই তো বৃষ্টির অবিরাম বর্ষণের সঙ্গে সহসাই ভেসে আসে কদম ফুলের রেণুর মিষ্টি সুবাস। কদম আর বর্ষা একে অপরকে আলিঙ্গন করে রয়েছে বহুকাল ধরে। কদম ছাড়া বর্ষা যেন একেবারেই বেমানান। এ জন্য কদম ফুলকে বলা হয় বর্ষার দূত।
দীর্ঘাকৃতি, বহুশাখাবিশিষ্ট বিশাল বৃক্ষ বিশেষ এবং এর ফুল গোলাকার। রূপসী তরুর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কদম। কদমের কাÐ সরল, উন্নত, ধূসর থেকে প্রায় কালো এবং বহু ফাটলে রুক্ষ, কর্কশ। শাখা অজস্র এবং ভূমির সমান্তরালে প্রসারিত। পাতা হয় বড় বড়, ডিম্বাকৃতি, উজ্জ্বল-সবুজ, তেল-চকচকে এবং বিন্যাসে বিপ্রতীপ। বোঁটা খুবই ছোট। নিবিড় পত্রবিন্যাসের জন্য কদম ছায়াঘন। শীতে কদমের পাতা ঝরে এবং বসন্তে কচি পাতা গজায়। সাধারণত পরিণত পাতা অপেক্ষা কচি অনেকটা বড়। কদমের কচি পাতার রঙ হালকা সবুজ। কদম ফুল দেখতে বলের মতো গোলাকার। কদমের একটি পূর্ণ মঞ্জরীকে সাধারণত একটি ফুল মনে করা হলেও এটি অজস্র ফুলের সমাহার। এর একটি মঞ্জরীতে প্রায় আট হাজার ফুল বিন্যস্ত থাকে। কদম ফুল দেখতে বলের মতো গোল, মাংসল পুষ্পাধারে অজস্র সরু সরু ফুলের বিকীর্ণ বিন্যাস। পূর্ণ প্রস্ফুটিত মঞ্জরির রঙ সাদা-হলুদে মেশানো হলেও হলুদ-সাদার আধিক্যে প্রচ্ছন্ন। প্রতিটি ফুল খুবই ছোট, বৃতি সাদা, দল হলুদ, পরাগচক্র সাদা এবং বহির্মুখীন, গর্ভদÐ দীর্ঘ। ফল মাংসল, টক এবং বাদুড়ও কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাদ্য। ওরাই বীজ ছড়ানোর বাহন। এর ঔষধি গুণও আছে।
কদম, কদম্ব নামে গাছটি অধিক পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম নিওলামারকিয়া কাদাম্বা। এটি রুবিয়েসি গোত্রের একটি উদ্ভিদ। কদমের আরেক নাম ‘নীপ’। এ ছাড়া কদমের হরেক নাম যেমন বৃত্তপুষ্প, মেঘাগমপ্রিয়, কর্ণপূরক, ভৃঙ্গবল্লভ, মঞ্জুকেশিনী, পুলকি, সর্ষপ, প্রাবৃষ্য, ললনাপ্রিয়, সুরভি, সিন্ধুপুষ্প। বাংলাদেশ,ভারত, চীন, মালয় কদমের আদি নিবাস। কদমের আবাস মূলত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। তবে লাল কদম বাংলাদেশে এখন বিলুপ্তির পথে। গাছের বৃদ্ধি অত্যন্ত দ্রæত বলে জ্বালানিকাঠের জন্য ব্যবহার করা হয়। কাঠ খুবই নরম তাই দাম কম, নরম কাঠ বাক্স-পেটরা ও অন্যান্য কাজে ব্যবর্হা করা হয়। ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে কদম গাছের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
শিল্প-সাহিত্যের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে কদম ফুলের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। কদম ফুল বর্ষার দূত। জৈষ্ঠ্যের শেষে আষাঢের শুরুতে কদম ফুল ফোটে। উপকুল এলাকার পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কদম ফুল গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে। কদম ফুলের মৌ মৌ গন্ধে আর দৃষ্টিনন্দন রুপ সবার নজর কাড়ছে। বর্ষার অনুভূতি ও অপরূপ সৌন্দরে‌্যর দাবিদার কদম ফুল। তবে কদম গাছ কমে যাওয়ায় এখন মানুষ ঐতিহ্য ভুলতে বসেছে। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে কদম ফুলের গাছ। আষাঢের কদম গাছ ফুলে ফুলে ভরে থাকত। কদম ফুল সৌন্দরে‌্য পিপাসুদের তৃপ্তি দিত। তরুণ-তরুণীরা কদম ফুল তাদের প্রিয়জনকে উপহার দিত। মেয়েরা পরতো খোঁপায়।খেলায় মেতে উঠত শিশুরা। কদম গাছ কমে যাওয়ায় এখন মানুষ ঐতিহ্য ভুলতে বসেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সংস্কৃতি ঐতিহ্য রক্ষায় কদম গাছ লাগানো দরকার। (লেখক; সাংবাদিক ও কলামিস্ট)

Share this post